জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব জেনে নেই 

📖 ১. কুরআন মাজীদ থেকে দলিল:

﴿يٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نُودِىَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ فَٱسْعَوْا۟ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ وَذَرُوا۟ ٱلْبَيْعَۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
(সূরা আল-জুমু‘আ: ৯)

🔹 বাংলা অনুবাদ:
“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণ (খুতবা ও নামাজ) এর দিকে ছুটে চলো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।”


📖 ২. হাদিস শরিফ থেকে দলিল:

🔹 প্রথম হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: “الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلَّا أَرْبَعَةً: عَبْدٌ مَمْلُوكٌ، أَوِ امْرَأَةٌ، أَوْ صَبِيٌّ، أَوْ مَرِيضٌ”
📚 (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৬৭)

🔹 বাংলা অনুবাদ:
আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“জুমার নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ, তবে চার শ্রেণির লোক ব্যতীত:
১. ক্রীতদাস, ২. নারী,৩. ছোট শিশু, ৪. অসুস্থ ব্যক্তি।”


📖 ৩. হানাফি মাজহাবের ফিকহের কিতাব থেকে দলিল:

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) – كتاب الصلاة – باب صلاة الجمعة:

وَهِيَ فَرْضُ عَيْنٍ عَلَى كُلِّ مُكَلَّفٍ ذَكَرٍ حُرٍّ مُقِيمٍ صَحِيحٍ غَيْرِ مَعْذُورٍ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ} وَالْأَمْرُ لِلْوُجُوبِ، وَلِحَدِيثِ: “لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ” رَوَاهُ مُسْلِمٌ.

বাংলা অনুবাদ:

“এটি (জুমার নামাজ) প্রত্যেক বালেগ, বুদ্ধিমান, পুরুষ, স্বাধীন, মুকীম, সুস্থ এবং অক্ষমতা থেকে মুক্ত ব্যক্তির ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলার বাণী: ‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত ধাবিত হও এবং বেচাকেনা পরিত্যাগ করো।’ (সূরা জুমুআহ: ৯) এখানে ‘ধাবিত হও’ (فَاسْعَوْا) শব্দটি ওয়াজিবের নির্দেশনা দেয়। এছাড়াও হাদিসে এসেছে: ‘কিছু লোক যদি জুমার নামাজ পরিত্যাগ করতেই থাকে, তবে আল্লাহ তাদের হৃদয় মোহর করে দেবেন।’ (সহীহ মুসলিম)”

🔹 ফতোয়ায় হিন্দিয়া:
“وَأَمَّا الْجُمُعَةُ فَهِيَ فَرْضُ عَيْنٍ فِي الْأَصَحِّ مِنْ قَوْلَيْ الْعُلَمَاءِ وَدَلِيلُهُ قَوْلُهُ تَعَالَىٰ: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ)”
📚 (ফতোয়ায় আলমগীরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬১)

🔹 বাংলা অনুবাদ:
“জুমার নামাজ ফরজ ‘আইন (প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক) – এটাই অধিক বিশুদ্ধ মত। এর প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী:
‘হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণ (খুতবা ও নামাজ) এর দিকে ছুটে চলো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিত্যাগ করো।'”

📖 ফতোয়ায় হিন্দিয়া থেকে আরবি দলিল:

جُمُعَةٌ فَرِيضَةٌ، وَلَا يُصَلَّى غَيْرُهَا، وَمَنْ تَرَكَهَا بِلَا عُذْرٍ فَهُوَ آثِمٌ.
📚 (الفَتَاوَى الهِنْدِيَّة ١/١٤٩)


🔹 বাংলা অনুবাদ:
“জুমার নামাজ ফরজ, এটি ছাড়া অন্য কোনো নামাজ (যোহর) পড়ার অনুমতি নেই। যদি কেউ বিনা ওজরে জুমার নামাজ ছেড়ে দেয় তবে সে গুনাহগার হবে।”


🔹 হেদায়া:
“وَأَمَّا الْجُمُعَةُ فَهِيَ فَرْضُ عَيْنٍ، وَيُقِيمُهَا السُّلْطَانُ أَوْ نَائِبُهُ”
📚 (হেদায়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫৩)

🔹 বাংলা অনুবাদ:
“জুমার নামাজ ফরজ ‘আইন এবং এটি শাসক বা তার নিযুক্ত প্রতিনিধি কায়েম করবে।”


✅ উপসংহার:

🔹 কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং হানাফি মাজহাবের ফতোয়াগ্রন্থ অনুসারে জুমার নামাজ ফরজ ‘আইন (প্রত্যেক মুসলিমের উপর বাধ্যতামূলক)
🔹 তবে, নারী, শিশু, দাস, ও রোগী এর ব্যতিক্রম।
🔹 এটি জামাআতে আদায় করতে হবে এবং মুসলিম শাসকের অনুমতি বা ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।